ঢাকা ০৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ মে ২০২৪, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি কে এই ওলেনা?

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৩৫:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০২২
  • ১০৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ওলেনা জেলেনস্কি। ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি। ইউক্রেনে দুই সপ্তাহ ধরে চলমান রুশ হামলার মধ্যে হঠাৎ আলোচনায় চলে এসেছেন এই নারী। দুদিন আগে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনবাসীর বাস্তব অবস্থা বর্ণনা করে এক ভিডিও ভাষণ দেওয়ার পর তাকে নিয়ে এখন সর্বত্র আলোচনা।

ওলেনা অবশ্য আগে থেকেই সেলিব্রিটি। ইনস্টাগ্রামে তার প্রায় ২৫ লাখ ফলোয়ার। এই সুদর্শনীকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়। যুদ্ধ লাগার পর দেশ ছেড়ে পালাননি।  তারা বর্তমানে ইউক্রেনেই আছেন।

স্কাই নিউজের বৃহস্পতিবারের এক প্রতিবেদনে ওলেনা জেলেনস্কির পরিচয়, তার সঙ্গে জেলেনস্কির পরিচয় নিয়ে বিস্তারিত উঠে এসেছে।
ওলেনা নিজ দেশে আগে থেকেই পরিচিত হলেও গত কয়েক দিনে বিশ্ববাসী তাকে নতুন করে চিনেছে। কিয়েভ হামলা নিয়ে তার পোস্টগুলোতে শিশুদের করুণ দশা এবং বেসামরিক লোকজনের চিত্র ফুটে উঠছে। এসব কারণে পাদপ্রদীপের নিচে চলে এসেছেন ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি।

ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দাবি, তিনি রাশিয়ার প্রথম টার্গেট আর তার পরিবার দ্বিতীয় টার্গেট।  দ্বিতীয় টার্গেট হয়েও ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউক্রেনীয়দের পাশে আছেন, দেশেই আছেন।

৪৪ বছর বয়সি ওলেনা জেলেনস্কির জন্ম ১৯৭৮ সালে। মধ্য ইউক্রেনের ক্রিভি রিহ শহরে তার জন্ম। একই শহরে তার স্বামীও জন্মগ্রহণ করেছিলেন।  তারা একই স্কুলে পড়ালেখা করেছেন। একে অপরের বন্ধু ছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগ পর্যন্ত তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠেনি।

ওলেনা জেলেনস্কি পেশায় একজন আর্কিটেক্ট।  আর জেলেনস্কি আইনে স্নাতক। ৮ বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর তারা ২০০৩ সালে বিয়ে করেন এবং রাজধানী কিয়েভে বসবাস শুরু করেন।

বিয়ের পর একপর্যায়ে লেখালেখিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন ওলেনা। আর জেলেনস্কি কমেডি গ্রুপে ঝুঁকে পড়েন।
এই দম্পতির ঘর আলো করে আছে দুই সন্তান। তাদের একজনের বয়স ৯ বছর অন্যজনের ১৭।  কন্যা ওলেকসান্দ্রার জন্ম ২০০৪ সালে আর ছেলে কিরিলিওর জন্ম ২০১৩ সালে।

স্বামীর কমেডি চরিত্রে অভিনয় করা অতটা পছন্দ ছিল না ওলেনার। ২০১৯ সালে ভগ ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটিই ইঙ্গিত দিলে তিন বলেছিলেন, আমাদের বহু পার্টিতে অংশ নিতে হতো।  জেলেনস্কির পাশাপাশি আমাকেও কৌতুক বলতে অনুরোধ করতে হতো। কিন্তু এটি আমার চরিত্রের সঙ্গে যায় না।

ওলেনা লাইমলাইটে আসা শুরু করেন মূলত জেলেনস্কির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারের সময়। ওলেনা তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে স্বামীর হয়ে প্রচার চালান।

স্বামীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন ওলেনা। টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি জেলেনস্কির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিরোধী ছিলাম। কারণ এটি ছিল একটা কঠিন সিদ্ধান্ত। এটি স্রেফ একটা প্রজেক্ট ছিল না। এটি জীবনের আলাদা একটা বাঁক ছিল।

তবে পরে আমি ভেবে দেখলাম এটি আমাদের জন্য একটা সুযোগ। সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে মানুষকে সচেতন করার একটা সুযোগ হিসেবে নিলাম জেলেনস্কির নির্বাচনকে। ওই নির্বাচনে জেলেনস্কি বিজয়ী হন।

জীবন ঝুকি নিয়েও জেলেনস্কি ও তার পরিবারের ইউক্রেন ত্যাগ না করার ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোচিত হচ্ছে। তাদের দেশপ্রেমের প্রশংসাও হচ্ছে।

সম্প্রতি ইউক্রেনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে ওলেন জেলেনস্কি লেখেন— আমি তোমার সঙ্গে বসবাস করতে পেরে গর্বিত। আজ আমার কোনো যন্ত্রণা নেই, চোখে পানিও নেই। আমি শান্ত ও দৃঢ় থাকব। আমাদের সন্তানের আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাদের পাশে আছি। আমি আমার স্বামীর সঙ্গে আছি।  আমি তোমাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি ইউক্রেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি কে এই ওলেনা?

আপডেট টাইম : ০২:৩৫:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ওলেনা জেলেনস্কি। ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি। ইউক্রেনে দুই সপ্তাহ ধরে চলমান রুশ হামলার মধ্যে হঠাৎ আলোচনায় চলে এসেছেন এই নারী। দুদিন আগে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনবাসীর বাস্তব অবস্থা বর্ণনা করে এক ভিডিও ভাষণ দেওয়ার পর তাকে নিয়ে এখন সর্বত্র আলোচনা।

ওলেনা অবশ্য আগে থেকেই সেলিব্রিটি। ইনস্টাগ্রামে তার প্রায় ২৫ লাখ ফলোয়ার। এই সুদর্শনীকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়। যুদ্ধ লাগার পর দেশ ছেড়ে পালাননি।  তারা বর্তমানে ইউক্রেনেই আছেন।

স্কাই নিউজের বৃহস্পতিবারের এক প্রতিবেদনে ওলেনা জেলেনস্কির পরিচয়, তার সঙ্গে জেলেনস্কির পরিচয় নিয়ে বিস্তারিত উঠে এসেছে।
ওলেনা নিজ দেশে আগে থেকেই পরিচিত হলেও গত কয়েক দিনে বিশ্ববাসী তাকে নতুন করে চিনেছে। কিয়েভ হামলা নিয়ে তার পোস্টগুলোতে শিশুদের করুণ দশা এবং বেসামরিক লোকজনের চিত্র ফুটে উঠছে। এসব কারণে পাদপ্রদীপের নিচে চলে এসেছেন ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি।

ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দাবি, তিনি রাশিয়ার প্রথম টার্গেট আর তার পরিবার দ্বিতীয় টার্গেট।  দ্বিতীয় টার্গেট হয়েও ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউক্রেনীয়দের পাশে আছেন, দেশেই আছেন।

৪৪ বছর বয়সি ওলেনা জেলেনস্কির জন্ম ১৯৭৮ সালে। মধ্য ইউক্রেনের ক্রিভি রিহ শহরে তার জন্ম। একই শহরে তার স্বামীও জন্মগ্রহণ করেছিলেন।  তারা একই স্কুলে পড়ালেখা করেছেন। একে অপরের বন্ধু ছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগ পর্যন্ত তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠেনি।

ওলেনা জেলেনস্কি পেশায় একজন আর্কিটেক্ট।  আর জেলেনস্কি আইনে স্নাতক। ৮ বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর তারা ২০০৩ সালে বিয়ে করেন এবং রাজধানী কিয়েভে বসবাস শুরু করেন।

বিয়ের পর একপর্যায়ে লেখালেখিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন ওলেনা। আর জেলেনস্কি কমেডি গ্রুপে ঝুঁকে পড়েন।
এই দম্পতির ঘর আলো করে আছে দুই সন্তান। তাদের একজনের বয়স ৯ বছর অন্যজনের ১৭।  কন্যা ওলেকসান্দ্রার জন্ম ২০০৪ সালে আর ছেলে কিরিলিওর জন্ম ২০১৩ সালে।

স্বামীর কমেডি চরিত্রে অভিনয় করা অতটা পছন্দ ছিল না ওলেনার। ২০১৯ সালে ভগ ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটিই ইঙ্গিত দিলে তিন বলেছিলেন, আমাদের বহু পার্টিতে অংশ নিতে হতো।  জেলেনস্কির পাশাপাশি আমাকেও কৌতুক বলতে অনুরোধ করতে হতো। কিন্তু এটি আমার চরিত্রের সঙ্গে যায় না।

ওলেনা লাইমলাইটে আসা শুরু করেন মূলত জেলেনস্কির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারের সময়। ওলেনা তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে স্বামীর হয়ে প্রচার চালান।

স্বামীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন ওলেনা। টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি জেলেনস্কির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিরোধী ছিলাম। কারণ এটি ছিল একটা কঠিন সিদ্ধান্ত। এটি স্রেফ একটা প্রজেক্ট ছিল না। এটি জীবনের আলাদা একটা বাঁক ছিল।

তবে পরে আমি ভেবে দেখলাম এটি আমাদের জন্য একটা সুযোগ। সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে মানুষকে সচেতন করার একটা সুযোগ হিসেবে নিলাম জেলেনস্কির নির্বাচনকে। ওই নির্বাচনে জেলেনস্কি বিজয়ী হন।

জীবন ঝুকি নিয়েও জেলেনস্কি ও তার পরিবারের ইউক্রেন ত্যাগ না করার ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোচিত হচ্ছে। তাদের দেশপ্রেমের প্রশংসাও হচ্ছে।

সম্প্রতি ইউক্রেনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে ওলেন জেলেনস্কি লেখেন— আমি তোমার সঙ্গে বসবাস করতে পেরে গর্বিত। আজ আমার কোনো যন্ত্রণা নেই, চোখে পানিও নেই। আমি শান্ত ও দৃঢ় থাকব। আমাদের সন্তানের আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাদের পাশে আছি। আমি আমার স্বামীর সঙ্গে আছি।  আমি তোমাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি ইউক্রেন।